Header Ads

Header ADS

মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন | Be a Human, When You’re Called a Human


Be a Human

মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন

মোঃ আব্দুর রউফ (লেখক: ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার)

 

 

আজকের লেখাটাতে লেখকের মন্তব্য দিয়েই শুরু করতেছি:

আসসালামু আলাইকুম। আজকে কিছু কথা লেখার চেষ্টা করবো যা মানুষের বাস্তব জীবনকে উদ্দেশ্য করে। একজন মানুষ আসলেই কি মানুষ নাকি সে নানা রূপের অধিকারী একজন নরপিশাজ। ছোট বেলায় গল্প শুনতাম হিংস্রতার দিক থেকে বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক এরা হলো সেরা। আসলে সেই ধারণা সেদিনই শেষ হয়ে গেছে যেদিন দেখেছি একজন মানুষ আরেকজন মানুষের ক্ষতি করতে ব্যস্ত। একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা আঁকে। আজকে লিখবো সেই সকল মানুষকে নিয়ে যারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে সকলকে ব্যবহার করে। দিনশেষে আবার ভূলে যায়। আজ লিখবো তাদের নিয়ে যারা শুধু মাত্র অর্থ উপার্জনে নিজেদেরকে বানিয়ে নিয়েছে চতুশপদ প্রাণীদের মতো।

 

মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন

 

ভূমিকা: নামেই মানুষ, গুণে নয়

মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত—সৃষ্টির সেরা জীব। কিন্তু আজ প্রশ্ন উঠছে, আমরা কি সত্যিই সেই “সেরা” জায়গায় আছি নাকি আজকে নেমে গিয়েছি অনেক নিম্নে? আজকের পৃথিবীতে মানুষ নামের আড়ালে বেড়ে উঠছে এমন এক জাতি, যারা স্বার্থের জন্য নিজের বিবেক বিক্রি করে দিয়েছে। আবার তারাই সমাজে মানবতার গান গেয়ে বেরাচ্ছেন।

যে মানুষ একসময় অন্যের সুখে হাসতো, আজ সে অন্যের অশ্রু দেখেও নির্লিপ্ত থাকে। যে মানুষ একসময় ভালোবাসা ছড়াতো, আজ সেই মানুষ ভালোবাসার বদলে বিষ ছড়ায়। কখনো কখনো তো এমন মনে হয়, বনের বাঘ বা সিংহও মানুষের চেয়ে অনেক বেশি মানবিক। কারণ তারা হিংস্র হলেও শুধু ক্ষুধা নিবারনের জন্য হ”ত্যা করে। কিন্তু মানুষ মিথ্যা অহংকার, প্রতিশোধ বা টাকার লোভে হ”ত্যা করে নিজের বিবেককে। মে”রে ফেলে দেয় ‍নিজের খুব কাছের মানুষকেও।

 

মুখে মানুষ, মনে পশু

আজকের সমাজে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দানব লুকিয়ে আছে মানুষের মনের ভেতরেই। মুখে হাসি, মনে বিষ—এই দ্বিমুখী চরিত্রই আজকের মানুষের সবথেকে বড় পরিচয়। সকলেই যে তেমন এমনটা কিন্তু নয়। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠই তেমন চরিত্র গ্রহণ করতেছে। একজন মানুষ অন্যের কষ্টকে ব্যবহার করে নিজের উন্নতির সিঁড়ি বানায়। কিন্তু পরিশ্রমীকে কেউ চেনে না। কেউ প্রশংসার মুখোশ পরে পেছনে ছুরি মারে, কেউবা দোয়া চায় কিন্তু অভিশাপ দেয় অন্যকে। মানুষ আজ এমন এক সত্তায় পরিণত হয়েছে, যার হৃদয়ে নেই কোনো করুণা,নেই মায়া, নেই অনুতাপ। তার হাসিতে আছে হিসাব, তার ভালোবাসায় আছে স্বার্থের গন্ধ।

 

টাকার দাসত্বে মানবতার মৃত্যু

টাকা আজ শুধু একটি কাগজ নয়, এটি মানুষের ঘারে এমন ভাবে বাসা বেধেছে, ঘুমের মধ্যেও মানুষ অর্থ দেখতে পায়, পৃথিবীর জীবনের জন্য তাদের কাছে শুধু অর্থই অপরিহার্য হয়ে গেছে। মানুষ এখন টাকা উপার্জনের জন্য নয়, বরং টাকার কাছে মাথা নত করার জন্য বেঁচে থাকে। একজন পিতা সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর বদলে ব্যস্ত থাকে লেনদেনে। কোথায় লেনদেন করলে অনেক মুনাফা পাওয়া যাবে সেই হিসাব কষতে আজ তিনি ব্যস্ত। একজন শিক্ষক আজ আদর্শ শেখানোর আগে হিসাব কষে নেয় তার সম্মানী কত হবে। একজন চিকিৎসক রোগী দেখার আগে ভিজিট নামক অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে যা আজ সমাজে সাধারণ হয়ে গেছে। একজন পুলিশ আজ হয়েছে ঘুষখোর, যে পেশা মানুষকে সত্য জানাতে সাহায্য করে সেই সাংবাদিকতা আজ নিছক একটা ব্যবসাতে রূপ নিয়েছে। একজন বন্ধু বন্ধুত্বের মায়া হারিয়ে ফেলে সামান্য লাভের মোহে বন্ধুর বুকে আঘাত করতে দুইবার ভাবেন না। । এইসব মানুষদের দেখে মনে প্রশ্ন জাগে—মানুষ কি সত্যিই টাকার চেয়ে বড়?
যখন অর্থই হয় জীবনের একমাত্র মানদণ্ড, তখন মানুষ হয়ে যায় রোবটের মতো—চলাফেরা করে, কিন্তু অনুভূতি নেই। যেন কোন এক যান্ত্রিক মেশিন।

 

নৈতিকতার কবরস্থান

একসময় মানুষের মাঝে লক্ষ করা যেত—লজ্জা, সম্মান, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, নিষ্ঠা। এখন সেগুলো শুধু বক্তৃতার  শব্দ, বইয়ের বাক্য, বা সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট। আজ সত্য বলা মানে দুর্বল হওয়া, আর মিথ্যা বলা মানে বুদ্ধিমান হওয়া। বর্তমান সৎ মানুষকে সবাই অবহেলা করে, আর অসৎ মানুষ পায় ক্ষমতা আর প্রশংসা। নৈতিকতা যেন আজ একটি পুরোনো ছবি, যার রঙ ম্লান হয়ে গেছে। কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে মানুষের মনুষ্যত্বের অনুভূতি। সমাজ একটি কথা ভুলে গেছে—একটা সভ্য জাতি টেকে নীতির উপর, প্রতারণা বা অর্থের উপর নয়।

 

সত্যিকারের মানুষ কাকে বলে?

সত্যিকারের মানুষ হওয়া মানে নাম মাত্র মানুষ নয়, বরং অনুভবের মানুষ হওয়া। আত্মমর্যাদা এবং প্রজ্ঞাবানই হলো প্রকৃত মানুষ। যে অন্যের চোখের অশ্রু দেখে নিজের চোখ ভিজিয়ে ফেলে, যে অন্যের ক্ষুধা দেখে নিজের পাতের ভাগ করে নিতে দুইবার ভাবে না, যে অন্যের ভুল ক্ষমা করে। কারণ সে জানে—ভুল করলে মানুষই করে। মানুষ হওয়া মানে বাঁচানো, ধ্বংস করা নয়। যে হৃদয়ে দয়া আছে, সহানুভূতি আছে, ভালোবাসা আছে — সেখানেই আছে মানবতার ছোঁয়া। আল্লাহর গুণের সামান্যতম নিদর্শন।

 

আয়নায় নিজেকে দেখা

প্রতিদিন সকালে আয়নায় নিজের মুখে হাসি না দেখে, বিবেকের মুখ দেখো।
·       নিজেকে প্রশ্ন করো— আমি কি কারও অশ্রুর কারণ?
·      আমি কি অন্যকে ঠকিয়ে একটু স্বস্তি পেয়েছি?
·       আমি কি নিজের মানবতাকে লুকিয়ে রেখেছি স্বার্থের আড়ালে?
যদি উত্তর “হ্যাঁ” হয়, তবে এখনই সময় নিজেকে বদলে নেবার। কারণ মানুষ হওয়া মানে নিখুঁত হওয়া নয়, বরং ভুল বুঝে তা সংশোধন করা। একটি সুন্দর হৃদয়ই পারে পৃথিবীকে বদলাতে তাই আমাদের কথা হোক এমন যে, তলোয়ার নয়, ভালোবাসাই পারে জয় আনতে।

 

শেষকথা: মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন

মানুষ হবার সময় এখনই—যখন মানুষ হওয়া সবচেয়ে কঠিন। অন্য সকল কিছুকে খুব সহজে চেনা গেলেও মানুষ চেনা সম্ভব না। এখন দরকার একদল মানুষের, যারা ভেতর থেকে ইসলামের আলোয় আলোকিত হবে; যারা বলবে— আমি টাকার দাস নই, আমি বিবেক সম্পন্ন একজন মানুষ। আমি ক্ষতি নয়, কল্যাণে বিশ্বাসী। আমি মুখে নয়, কাজেই প্রমাণ করবো আমি মানুষ
মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন — যখন সমাজে অন্ধকার, তখনই আলো হাতে নিয়ে আদুল গাঁয়ে বের হতে হবে। যখন মিথ্যা রাজত্ব করছে, তখনই সত্যের সৈনিক হতে হবে। যখন সবাই নিজের জন্য বাঁচে, তখনই অন্যের জন্য বাঁচতে হবে, অন্যকে সাহায্য করতে হবে। তবেই তুমি হবে সময়ের সেরা কিংবদন্তী।

 

 

এলোমেলো কথা গুলো গুছিয়ে পড়ার অনুরোধ করছি।
(লেখক: ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার)

 

Keyword | কীওয়ার্ড

মানুষ | Humanity | মানবতা | Kindness | বিবেক | Conscience | নৈতিকতা | Morality | সমাজ | Society | স্বার্থপরতা | Selfishness | ভালোবাসা | Love | সত্য ও মিথ্যা | Truth and Lies | ইসলামিক দৃষ্টিকোণ | Islamic Perspective | আত্মজাগরণ | Self Awakening

 

FAQ (Frequently Asked Questions)

১. মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন — কথাটির অর্থ কী?
উত্তর: এটি একটি নৈতিক আহ্বান, যা বলে — মানুষ হবার সময় এখনই, যখন মানবতা সবচেয়ে বিরল হয়ে গেছে।
২. কেন মানুষ আজ স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে?
উত্তর: আধুনিক প্রতিযোগিতা, অর্থলোভ ও নৈতিক শিক্ষার অভাব মানুষকে স্বার্থপর করেছে।
৩. সত্যিকারের মানুষ কাকে বলা যায়?
উত্তর: যে অন্যের কষ্টে কষ্ট পায়, যে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে—সেই সত্যিকারের মানুষ।
৪. টাকার দাসত্ব মানে কী?
উত্তর: যখন মানুষ টাকার জন্য বিবেক বিক্রি করে দেয়, তখন সে টাকার দাসে পরিণত হয়।
৫. আজকের সমাজে মানবতার অবস্থা কেমন?
উত্তর: মানবতা এখন সংকটে; মানুষ মুখে ভালো কিন্তু কর্মে কঠোর ও স্বার্থান্ধ।
৬. কিভাবে আমরা মানবতা ফিরিয়ে আনতে পারি?
উত্তর: সত্য, দয়া, এবং ইসলামী নৈতিক শিক্ষা চর্চার মাধ্যমেই মানবতা ফিরতে পারে।
৭. নৈতিকতার পতনের প্রধান কারণ কী?
উত্তর: লোভ, অসততা, এবং আত্মকেন্দ্রিক চিন্তাই নৈতিকতার পতনের মূল কারণ।
৮. বিবেকবান মানুষ হওয়া কেন জরুরি?
উত্তর: বিবেক মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে—যার বিবেক জাগ্রত, সে কখনো অন্যায় করে না।
৯. ইসলামের দৃষ্টিতে মানবতা কীভাবে ব্যাখ্যা করা হয়?
উত্তর: ইসলাম শেখায়—মানুষের কল্যাণে কাজ করাই প্রকৃত ঈমানের পরিচয়।
১০. আমরা কিভাবে “মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন” কথাটিকে জীবনে প্রয়োগ করবো?
উত্তর: নিজের কাজে মানবতার প্রকাশ ঘটিয়ে, অন্যের কল্যাণে এগিয়ে থেকেই আমরা সত্যিকারের মানুষ হতে পারি।
উপদেশ: এই পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো “মানুষ হওয়া।” তাই যখনই নিজেকে হারিয়ে ফেলো, মনে রেখো— “মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন।”

 


আরও জানুন:

শিক্ষা ও লেখালেখি, বাংলাদেশ

No comments

Theme images by zbindere. Powered by Blogger.