বাংলাদেশ ও ইতিহাস | Bangladesh and History
বাংলাদেশ ও ইতিহাস
বাংলাদেশ নামটি শুনলেই
আমাদের মনে বেজে ওঠে ১৯৫২এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা, ১৯৬৯ এর গনঅভ্যুত্থান,
১৯৭০ এর নির্বাচন, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ২০২৪ এর বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কথা।
—এটি কেবল একটি ভূখণ্ডের নাম নয়! এটি আমাদের প্রাণ, আমাদের আবেগ এবং আমাদের গর্বের
প্রতীক। ভারতীয় উপমহাদেশে এটিই প্রথম রাষ্ট্র যেখানে ভাষার জন্যও মানুষের আত্মত্যাগের
নিদর্শন পাওয়া যায়। এবং আন্দোলনের দিক থেকেও আমাদের এই বঙ্গভূমি সবার থেকে এগিয়ে। দক্ষিণ
এশিয়ার ছোট্ট এই দেশটিতে সমৃদ্ধ ইতিহাস, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
এবং সম্ভাবনাময় উন্নয়নের জন্য বিশ্বে পরিচিত। আমাদের দেশের মানুষ, আমাদের জমি, আমাদের
নদী সবই যেন বাঙ্গালীর আবেগের স্থান। প্রতিটি বাঙ্গালি জন্মভূমিকে অনেক বেশী ভালোবাসে
বলেই তো এতো আন্দোলন, এতো সংগ্রাম।
বাংলাদেশের ইতিহাস ও গৌরব
বাংলাদেশের ইতিহাস আত্মত্যাগের
ইতিহাস, সংগ্রামের ইতিহাস, বীরদের ইতিহাস, গৌরবের গল্পে ভরপুর। আমাদের বাঙ্গালী জাতির
ইতিহাসের সূচনা হয় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তৎকালিন পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী
যখন আমাদের উপর উর্দূ ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল, তখনই ঘুরে দারিয়েছিল
এ জাতি। সেদিনই প্রমাণ করেছিল বাঙ্গালী ভিতু বা কাপুরুষ নয়। ১৯৫২ এর ২১শে ফেব্রুয়ারীতে
আন্দোলনে শহীদ হয়েছিলেন রফিক, শফিক, বরকত, জাব্বার, সালাম সহ নাম না জানা আরও অনেকে।
এসময় থেকেই শুরু হয়েছিল বাঙ্গালীর নতুন অধ্যয়। শুরু হয় পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের
শত্রুতা। শুরু হয় বৈষম্য, এবং এই বৈষম্য থেকে বেরিয়ে অধিকার আদায়ের আন্দোলনই
একসময় ১৯৭১ এ গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়। এবং যার ফলাফল স্বরূপ বাংলা ভাষা অনুযায়ী
দেশের নাম হয় “বাংলাদেশ”।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
সৌন্দর্যের দিক থেকে
বাংলাদেশকে আপনি কততম করবেন জানি না। তবে আমি তো প্রথমই বলবো। বাংলাদেশের প্রকৃতির
এ শোভা আহ্ আর কোথায় বা পাওয়া যাবে? বাংলাদেশকে বলা হয় নদীমাতৃক দেশ। পদ্মা, মেঘনা,
যমুনা, কর্ণফুলী, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা ও করতোয়াসহ শত শত নদী বয়ে চলেছে এ দেশের
বুক চিরে। যা দেশের অন্যতম শোভা বাড়িয়ে দিয়েছে। এদেশের শতকরা ২-৩% মানুষ
মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এবং এছাড়াও প্রায় ১০-১২% মানুষ
মাছ চাষের সাথে যুক্ত। যার জন্য আমাদের বলা হয়ে থাকে “মাছে ভাতে বাঙ্গালী” । চারিদিকে
তাকালে দেখা যায় সবুজ ফসলের মাঠ, গ্রামীণ পথ, শাপলা ভরা পুকুর কিংবা পাখির কলতানে ভরা
সকাল—সবকিছু মিলে এই দেশকে করে তুলেছে অনন্য সুন্দর।
এছাড়াও বিশ্বের বৃহত্তম
ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন আমাদের দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবস্থিত।
যেখানে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এবং জানলে অবাক হবেন আমাদের সুন্দরবন এই “রয়েল বেঙ্গল
টাইগারের” জন্য বিখ্যাত। আবার রয়েছে কক্সবাজারের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, যেখানে প্রতি
বছর হাজারো পর্যটকের ভীর জমে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতো সুন্দর যে কেউ
না গিয়ে কল্পনাও করতে পারবে না। যা প্রতিটি পর্যটককেই মুগ্ধ করে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ,
সিলেটের চা-বাগান, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় কিংবা সোনালী ধানের মাঠ—এসব মিলিয়ে বাংলাদেশের
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য
বাংলাদেশের সংস্কৃতি
বহু পুরোনো যা প্রায় হাজার বছরের ঐতিহ্যের নিদর্শনকে বহন করছে। বাউল গান, লোকসংগীত,
কবিতা, নৃত্য ও নাটক এ দেশের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। পালাগানের আসরে ভোর হলেও মানুষ
থেকে যায়। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ, নবান্ন উৎসব ও পিঠা
উৎসব আমাদের সংস্কৃতিকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে।
শীতকালে আবার আমাদের
এই সংস্কৃতিতে নতুন রূপ দেখা যায়। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি কোণায় কোণায় শুরু হয় ইসলামী
জলসা ও ইছালে সওয়াব। যা শুধু আমাদের সংস্কৃতি নয় আমাদের মুসলিম ধর্মের মানুষের জন্য
খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা ধর্মপ্রাণ মুসলিম এই আয়োজন করার মাধ্যমে নিজেদের ঈমানকে
শক্ত করার চেষ্টা করি। ইসলামী আকিদাহ্, ইসলামী দ্বীনের বিধান সম্পর্কে জেনে যেন সঠিক
পথে চলতে পারি এজন্য আমাদের এই আয়োজন।
বাংলাদেশের ঐতিহ্য শুধু
উৎসবেই সীমাবদ্ধ নয়, মানুষের আতিথেয়তা, মমতা ও সহযোগিতার মানসিকতাও এ দেশের অন্যতম
পরিচয় বহন করে। এ কারণেই বিশ্ববাসীর কাছে বাঙালি জাতি সবসময় অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা
পায়।
বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন
বাংলাদেশে অন্য সকল বিষয়ে
অনেক বেশি অগ্রগতি পেলেও অর্থনীতি ও উন্নয়নে অন্যসকল দেশ হতে আমরা অনেক পিছিয়ে। তবে,
খুব দ্রুতই বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবেও অগ্রগতি পাচ্ছে। যার প্রমাণ মেলে বাংলাদেশের বিভিন্ন
নতুন স্থাপনা গুলো দেখার মাধ্যমে। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ হচ্ছে উন্নয়নের এক রোল মডেল।
কৃষিখাত, শিল্পখাত, পোশাক খাত, তথ্যপ্রযুক্তি ও রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ
করতে বিপুল পরিমাণে প্রভাব ফেলেছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ বড় বড়
অবকাঠামোগত উন্নয়ন বিশ্বে বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে।
গ্রামীণ অর্থনীতি ও মাইক্রোক্রেডিট
এর উদ্যোগ নারীর অধিকার বাস্তবায়ন এবং দারিদ্র্যতা হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্যোগ শিক্ষায়, স্বাস্থ্যসেবায় এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে নতুন দিগন্ত
উন্মোচন করেছে।
মন্তব্য
আমাদের কাছে বাংলাদেশ শুধু একটি দেশ নয়, এটি আমাদের প্রাণ, আমাদের গর্ব, আমাদের পরিচয়। এদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও উন্নয়ন আমাদেরকে করে তোলে আরও বিনয়ী। আসুন আমরা সবাই মিলে এই প্রাণের বাংলাদেশকে ভালোবাসি, এবং আগামী প্রজন্মকে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিতে অঙ্গীকার বদ্ধ হই।
পোস্ট কি-ওয়ার্ড | Post Keyword:
প্রশ্নোত্তর পর্ব | Frequently Asked Questions (FAQ)
উত্তর: বাংলাদেশের ইতিহাস গৌরবময় কারণ এটি ভাষার জন্য রক্তদানের নজির, স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ এবং বাঙালির আত্মত্যাগের অসংখ্য গল্পে ভরপুর।
উত্তর: পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে চাইলে বাঙালিরা প্রতিবাদ করে। এই আন্দোলনে শহীদ হন রফিক, শফিক, বরকত, সালামসহ আরও অনেকে।
উত্তর: সুন্দরবন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, সিলেটের চা-বাগান এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রধান আকর্ষণ।
উত্তর: বাউল গান, লোকসংগীত, কবিতা, নাটক, পহেলা বৈশাখ, নবান্ন উৎসব এবং আতিথেয়তার সংস্কৃতি বাংলাদেশের ঐতিহ্যের প্রধান দিক।
No comments